ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি হলেও ইরান তার অবস্থান থেকে সরবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
তিনি জানিয়েছেন, ইরানের উপর ‘যুদ্ধ’ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর কাছে তাঁরা মাথা নত করবেন না। কোনও ‘চাপিয়ে দেওয়া শান্তি’র কাছেও মাথা নত করবে না ইরান।
ইসরায়েলে হামলা শুরুর পর বুধবার (১৮ জুন) প্রথমবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তেহরানভিত্তিক বার্তা সংস্থা তাসনিম তাঁর বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করেছে।
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ইসরায়েলকে তার ভুলের জন্য শাস্তি দেওয়া হবে। ইরান চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে, ঠিক তেমনি এটি চাপিয়ে দেওয়া শান্তির বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে।
ইরানি নেতা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের মুখে ইরান কারো কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। খামেনি বলেন, বুদ্ধিমান লোকজন, যাঁরা ইরানকে চেনেন, ইরানিদের চেনেন, ইরানের ইতিহাস জানেন, তাঁরা কখনও এই ধরনের হুমকির ভাষায় কথা বলেন না। কারণ হুমকির ভাষায় ইরানিরা কখনোই সাড়া দেয় না। আমেরিকানদের জানা উচিত যেকোনো মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ নিঃসন্দেহে অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রশাসন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী চান, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ করুক, যাতে ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়। এই আবহেই যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে।
পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু মন্তব্যে জল্পনা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) তিনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করতে বলেন। হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, আমরা জানি ইরানের তথাকথিত ‘সুপ্রিম লিডার’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি সহজ লক্ষ্যবস্তু। তবে আমরা এখনই তাকে হত্যা করব না, অন্তত এখন নয়।
ট্রাম্প ‘আমরা’ শব্দটিতে জোর দেওয়ার পরেই সেই জল্পনা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। অনেকের মতে, ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে জুড়েই ওই মন্তব্য করেছিলেন।
খামেনি ট্রাম্পের এই হুমকির সরাসরি জবাব দিয়ে বলেন, আমেরিকানদের বুঝতে হবে, তাদের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপের পরিণাম হবে ভয়াবহ ও অপূরণীয়।
ইরান বর্তমানে একাধিক ফ্রন্টে চাপের মুখে রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযান নিয়ে তেহরান সরাসরি তেলআবিবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সৌদি আরব ও আমিরাতের সঙ্গে সাম্প্রতিক কিছু পুনর্মিলনের পরও শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা পেছনের দরজা দিয়ে এখনো সক্রিয়। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে এবং নতুন করে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে খামেনির ভাষণে একটি বার্তা স্পষ্ট, আর তা হলো: ইরান কোনো বিদেশি চাপ, হুমকি বা রাজনৈতিক সমঝোতার নামে জোরপূর্বক শান্তি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা মেনে নেবে না। তাদের প্রতিরোধ, আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতা প্রশ্নে তারা আপসহীন।
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এসকে
প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটে ইসরায়েল : ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল